Computer & Laptop, Future, News

ওয়াই ফাই রাউটার কেনার আগে যা যা করবেন।

আমরা অনেকেই এখন ডিভাইস ব্যবহার করি যেগুলো ওয়াইফাই সাপোর্টেড। কিন্তু ওয়াইফাই কানেকশন বাসায় ব্যবহার করতে আমাদের ইন্টারনেট কানেকশনের পাশাপাশি রাউটার কেনার প্রয়োজন পরে। কিন্তু অনেকেই বুঝেন না রাউটার কেনার আগে কি কি  বিষয় খেয়াল রাখা উচিত। আমার এই পোস্ট এ আমি চেষ্টা করেছি কিছু বিষয় তুলে ধরার যা রাউটার কেনার আগে আপনার খেয়াল রাখা উচিত।

১. আপনি কয়টা ডিভাইস ব্যবহার করবেন তা আগে ঠিক করুন।

২. আপনার কতটুকু জায়গা কাভারেজ প্রয়োজন সেটি ঠিক করুন।

৩. আপনার বাসার গঠন বুঝে নিন। ওয়াইফাই দেয়াল ভেদ করে যেতে সিগনাল উইক হয়ে যায়। এজন্য ভালো কাভারেজ পাওয়া যায়না। আপনার বাসায় যদি অনেক দেয়াল থাকে আর আপনি পুরু বাসায় কাভারেজ পেতে চান তাহলে হাই পাওয়ার্ড রাউটার লাগবে।

৪. ইন্টারনেট কানেকশন ছাড়াও আপনার কি কি ফিচার লাগবে ঠিক করুন।

৪.১ ৩জি ৪জি মডেম সাপোর্ট– অনেক রাউটার আছে যেগুলো তে মডেম ব্যবহার করা যায়। সেসব রাউটারে ইউএসবি পোর্ট থাকে এবং ওয়ান পোর্ট ও থাকে যাতে ব্রডব্যান্ড এর লাইন ব্যবহার করা যায়। কিন্তু মনে রাখবেন মডেমটি অবশ্যই অটো কানেক্ট করার কাপাবিলিটি থাকতে হবে। সব রাউটার সব মডেম সাপোর্ট করে না। রাউটারের ওয়েবসাইটে মডেম কম্পাটিবিলিটি লিস্ট দেয়া আছে। যারা বাংলালায়ন আর কিউবি মডেম ব্যবহার করতে চান অটো কানেক্ট হয় এমন মডেম নিতে হবে ওদের কাছ থেকে। আপনি যদি সিওর না হয়ে থাকেন তাহলে কাস্টমার কেয়ারে ফোন করে জেনে নিবেন।

৪.২ এডিএসএল সাপোর্ট– আমাদের দেশে বিটিসিএল টেলিফোন সেট দিয়ে ইন্টারনেট কানেকশন দিয়ে থাকেন। বিটিসিএল এর কানেকশন এর জন্য এডিএসএল রাউটার লাগবে।

৪.৩ ইউএসবি কানেকশন– রাউটারে ইউএসবি কানেকশন থাকলে আপনি এফটিপি সার্ভার হোস্ট করতে পারবেন। কারন আপনি সহজেই ইউএসবি স্টোরেজ ডিভাইস কানেক্ট করতে পারবেন।

***৩জি/৪জি রাউটারেও ইউএসবি পোর্ট থাকে কিন্তু আপনি যদি ভাবেন সেটি থেকে ফাইল সার্ভার হোস্ট করবেন সেটি ভুল। আপনার রাউটারে ফাইল সার্ভার হোস্ট করার অপশন থাকতে হবে।***

৪.৪ ডাউনলোড ম্যানেজার– আপনি যদি হেভি ডাউনলোডার হয়ে থাকেন আর বাসায় না থাকলেও ডাউনলোড করতে চান তাহলে ডাউনলোড ম্যানেজার এনাবল রাউটার কিনুন। আপনি ইউএসবি স্টোরেজ কানেক্ট করে পিসি ছাড়া ডাউনলোড করতে পারবেন।

৪.৫ স্ট্রিমিং– আপনার বাসায় স্মার্ট টিভি আছে আপনি চান আপনার পিসি থেকে মুভি দেখতে আপনি সহজেই রাউটার থেকে এ সুবিধা পেতে পারেন। ভালো সার্ভিস পাওয়ার জন্য অন্তত ৩০০ এমবিপিএস এর রাউটার প্রয়োজন।

৪.৬ ৫ গিগাহার্টজ ব্যান্ড– বর্তমানে প্রায় সব ওয়ারলেস ডিভাইস ই ২.৪ গিগাহার্টজ ব্যান্ড এ পরিচালিত হয়। এর জন্য ফ্রিকুয়েন্সি জ্যাম এর কারনের স্ট্রিমিং এ সমস্যা হয়। আপনি যদি বাসায় স্মার্ট টিভি, পিএস৪ এ স্ট্রিমিং করে থাকেন তাহলে ৫ গিগাহার্টজ ব্যান্ড আপনাকে অনেক ভালো সাপোর্ট দিবে। ৫ গিগাহার্টজ ব্যান্ড ব্যবহার করতে হলে রাউটার এবং ওয়াইফাই ডিভাইস ২ টাতেই ৫ গিগাহার্টজ সাপোর্ট করতে হবে।

৪.৭ ক্লাউড সাপোর্ট– আপনি  বাসার বাইরে থেকেও রাউটার কন্ট্রোল করতে পারবেন।

৪.৮ ভিপিএন সাপোর্ট– মনে করুন আপনার বাসা মিরপুরে। আপনার বাসায় প্রাইভেট আইপি তে আপনি ফাইল সার্ভার হোস্ট করেছেন এখন আপনি চাচ্ছেন আপনার সার্ভারটি আপনার বন্ধু গুলশান থেকে এক্সেস করুক। সাধারনত এটি সম্ভব না। কিন্তু ভিপিএন সাপোর্টেড রাউটার দিয়ে এই কাজটি করা সম্ভব।

৪.৯ পোর্টাবিলিটি– কিছু রাউটার আছে যেগুলো মোবাইলের সিম ব্যবহার করা যায়। ডিভাইসে একটা ব্যটারি থাকে যেটা চার্জ দিয়ে বাসার বাইরে রাউটার ব্যবহার করা যায়।

 

৫. উপরের ফিচার গুলোর উপর নির্ভর করবে আপনার বাজেট। যত বেশি ফিচার সে অনুপাতে প্রাইজ ও বারবে।

৬. কোন ব্রান্ডের রাউটার কিনবেন? নিচে কিছু বিষয় দেয়া হলো যা খেয়াল রাখা উচিত-

৬.১ আপনার আইএসপি কোন কোন রাউটার সাপোর্ট করে জিজ্ঞেস করে নিন।

৬.২ আইএসপি যেই ব্রান্ড নিতে বলে সেটি নিন।

৬.৩ যদি আইএসপি যে কোন রাউটার নিতে বলে তাহলে আপনার বাজেট অনুযায়ী রাউটার কিনুন।

৬.৪ ব্রান্ড প্রায়োরিটি-  সিসকো, লিঙ্কসিস, নেটগিয়ার, আসুস, টিপি লিংক, ডি লিংক, টেন্ডা ইত্যাদি।

৭. ব্রান্ডতো সিলেক্ট করলেন এবার কোন মডেল নিবেন? আপনার যেই যেই ফিচার লাগবে সেসব ফিচার যে মডেলে থাকবে সেটি নিবেন। আপনার বাজেট এখানে বড় ভূমিকা রাখবে। ১ থেকে ৪ নাম্বার পয়েন্ট গুলো নোট করুন তারপর মিলিয়ে নিন সেই মডেলে এসব পাবেন কিনা।

৭.১ শুধু ইন্টারনেট কানেকশনের জন্যঃ ১৩০০ থেকে ২০০০ স্কয়ার ফিট এর বাসার জন্য হাই পাওয়ার্ড রাউটার। যেমন- TP Link TL-WR841HP।  ১০০০ থেকে ১৩০০ পর্যন্ত TP Link TL-WR841N। ৮০০ থেকে ১০০০ পর্যন্ত TP Link TL-WR740N।

(মডেল গুলো শুধু মাত্র আইডিয়া দেয়ার জন্য উদাহরন হিসেবে দেয়া হয়েছে অন্য যে কোন ব্রান্ড আপনি কিনতে পারেন।)

৭.২ ৩জি/৪জি রাউটার- TP Link TL-MR3420

৭.৩ এডিএসএল রাউটার- TP Link TD-W8901N;  TP Link TD-W8151N

৭.৪ ইউএসবি পোর্ট সহ রাউটার – TP LINK TL-WR842ND; Netgear  JNR3210

৭.৫ ডাউনলোড ম্যানেজার সহ রাউটার – ASUS RT-N66U

৭.৬ স্ট্রিমিং রাউটার – Netgear WNDR4500;

৭.৭ ৫ গিগাহার্টজ এনাবল রাউটার – TP Link Archer C5

৭.৮ ক্লাউড সাপোর্টেড রাউটার – Dlink DIR-605L

৭.৯ ভিপিএন সাপোর্টেড রাউটার – Cisco RV042

৭.১০ পোর্টেবল রাউটার- TP Link M5350; TP Link TL MR3020

৮. রাউটার কেনার পর যা করবেন-

৮.১ রাউটার এমন একটা স্থানে রাখবেন যাতে কাভারেজ ঠিক মত পায়। যত খোলা মেলা যায়গায় রাখতে পারবেন তত ভালো সার্ভিস পাবেন।

৮.২ ঠিক মত কনফিগার করুন।

৮.৩ নিয়মিত ফার্মওয়ার আপডেট দিন।

 

ডেমো ১ঃ

আমি ২ টা স্মার্টফোন আর ১ টা পিসি ব্যবহার করবো। আমার বাসা ১০০০ স্কয়ার ফিটের। বাসায় দেয়াল খুব একটা বেশিনা। আমার শুধু ইন্টারনেট কানেকশনের জন্য রাউটার ব্যবহার করবো। এখন আমার জন্য কোন রাউটার ঠিক হবে??

আমার টার্গেট যেহেতু শুধু ইন্টারনেট লাগবে ওয়াইফাই হিসেবে সেজন্য আমার খুব একটা দামি রাউটারের প্রয়োজন নেই। ১২০০ টাকা থেকে ৩০০০ টাকার মধ্যে যে কোন রাউটার আমি কিনতে পারি।

কিন্তু আমার আইএসপি এর সাথে কথা বলে দেখলাম যে তারা টিপি লিংক প্রেফার করছে। সেজন্য আমাকে টিপি লিংক এর যে কোন মডেল নিতে হবে।

আমি এখন ১৪০০ টাকার ৭৪০এন ও কিনতে পারি আবার ২১০০ টাকার ৮৪১এন ও কিনতে পারি। সার্ভিস মোটামুটি একি পাবো শুধু ৮৪১এন এ কাভারেজ একটু বেশি পাবো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *